
প্রকাশিত: Wed, Dec 7, 2022 9:13 PM আপডেট: Wed, Apr 30, 2025 12:37 AM
ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই চেতনার পরম কিংবা চরম স্তরে উন্নীত হওয়ার চর্চা ছিলো
স্বকৃত নোমান: জীবকুলের মধ্যে মানুষই একমাত্র জীব, যে লাভ করতে পারে পরম জ্ঞান বা পরম চেতনা। এই চেতনা লাভ করতে সাপ পারে না, ইঁদুর পারে না, মাকড়সা পারে না, বাঘ পারে না, সিংহ পারে না, শেয়াল পারে না। কেবলই মানুষ পারে। এই চেতনা লাভের পর ব্যক্তি হয়ে ওঠেন সাধারণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক অসাধারণ মানুষ, যাকে বলা হয় পরিপূর্ণ মানুষ। এই চেতনা লাভের পর মহাবিশ্ব তথা মহাপ্রকৃতি থেকে ব্যক্তি নিজেকে আর আলাদা করতে পারে না। অর্থাৎ সসীম ব্যক্তির সঙ্গে অসীম প্রকৃতির মহামিলন ঘটে যায়। ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই চেতনার পরম কিংবা চরম স্তরে উন্নীত হওয়ার চর্চা ছিল। প্রাচীন ঋষিরা এই চর্চা করে গেছেন। তাঁরা একে বলেছেন কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ, ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উত্থান বা আত্মশক্তির জাগরণ। তাঁরা বলেছেন, কুণ্ডলিনী জাগরণে মানুষের দেহ-মনের ভেদ ঘুচে যায়। ফলে জগতের চিৎশক্তির দিকে মানুষের ক্রমবিকাশ ঘটে। যে মানুষ কুণ্ডলিনীর জাগরণ ঘটাতে সক্ষম হন তার কাছ থেকে ঈশ্বর দূরে থাকেন না। সেই মানুষ ঈশ্বরে লীন হয়ে যান। ঈশ্বর মানে হস্ত-পদযুক্ত মহাবিশ্বের কোনো শাসক নন। ঈশ্বর হচ্ছেন চেতনার উন্নত স্তর, পরম জ্ঞান বা পরম চেতনা।
এই কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণকে চীনে বলা হয় ‘চি’, জাপানে ‘কি’, খৃষ্টধর্মে ‘হোলি স্প্রিট’, বৌদ্ধধর্মে ‘বোধিপ্রাপ্তি’ এবং ইসলাম ধর্মে ‘নবুয়ত প্রাপ্তি’। সুফিধারার সাধকরা একে বলে থাকেন ‘কাশফ্ খোলা’ অর্থাৎ অন্তর্চক্ষু খুলে যাওয়া। ভারতীয় পুরাণ আবার একে বলছে তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন। এ কারণেই পরমপুরুষ তথা পরমজ্ঞানের প্রতীক মহাদেব শিবের কপালে রয়েছে তৃতীয় নেত্র। এই নেত্র আসলে পরম জ্ঞানেরই প্রতীক। এই কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের জন্য তথা চেতনার পরম স্তরে পৌঁছার জন্য হযরত মুসা গিয়েছিলেন তুর পর্বতে। পর্বতে উঠে তিনি যে উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলেন, তা আসলে জ্ঞানেরই বিকিরণ। তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন তিনি আর সাধারণটি নেই। ফলে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। কাঁপছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে যিনি অভয় দিলেন, ‘হে মুসা ভয় পেও না’, তিনিই হচ্ছে পরম চেতনা। হযরত খিজিরের সঙ্গে মুসার সাক্ষাৎ এবং পরিভ্রমণ হয়েছিল পরম চেতনা লাভের জন্যই এবং হযরত মুসা তা লাভ করতে পেরেছিলেন। একইভাবে গৌতম বুদ্ধ এই পরম চেতনার হদিস পেয়েছিলেন বোধিবৃক্ষের তলায়। একই চেতনার জাগরণের জন্যই হযরত মুহাম্মদ গেলেন হেরা পর্বতের গুহায়। পরম চেতনায় পৌঁছে তিনি বলে উঠলেন, ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক।...পড়ো তোমার প্রভুর নামে।’ মুসার মতো তিনিও কাঁপছিলেন। জ্বর উঠে গিয়েছিল। ঘরে ফিরে স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘জাম্বিলুনি জাম্বিলুনি।...আমাকে কম্বল দাও, আমাকে কম্বল দাও।’ ক্রৌঞ্জ তথা কোঁচ বককে তীরবিদ্ধ অবস্থায় দেখে বল্মিকী যে বলে উঠেছিলেন ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ’, সেটা ছিল বাল্মিকীর কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের ক্ষণ, পরম চেতনার উন্নীত হওয়ার মুহূর্ত। এই চেতনায় পৌঁছেই আইনস্টাইন আবিষ্কার করেন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব, জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব এবং নিউটন গতির সূত্র। চেতনার এই স্তরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন বলেই রবীন্দ্রনাথের কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে গীতাঞ্জলি আর গীতবিতান।
সাপিয়েন্স থেকে মানুষ যে আজকের এই মানুষে উন্নীত হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে তার পরম চেতনার লাভের আকাঙ্ক্ষা ছিল বলে, পরম চেতনা লাভের চর্চা ছিল বলে। সে সদা চেষ্টা করেছে তার কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের। কখনো সফল হয়েছে, কখনো ব্যর্থ। সেই চেষ্টা এখনো মানুষের মধ্যে আছে। যে এই শক্তির জাগরণ ঘটাতে পারে, যে পরম জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়, তাকে কোনো ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা স্পর্শ করতে পারে না। তার ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠে মহাসমুদ্রের মতো প্রশস্ত এবং হিমালয়ের মতো উঁচু। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
